আজ শুক্রবার, ২২শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পরের পুকুরে শামীম ওসমানের সাঁতার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: 
আগের মতো ক্ষমতা নেই তার। এক সময়ে জেলার দন্ডমুন্ডের কর্তা বলা হলেও এখন ছোট হয়ে এসেছে সীমানা । তবে সুযোগ পেলেই নিজের পুকুর রেখে পরের পুকুরে সাঁতার কাটেন শামীম ওসমান। শেষতক তার এই স্বভাব দেখা গেছে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের বেলায়।
শামীম ওসমান হলেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ। অতীতেও একবার ভোট পেয়ে আরেকবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসনে এমপি হয়েছেন তিনি। নিজের এলাকায় নানা সমস্যা থাকলেও এই আলোচিত রাজনীতিক ফাঁকা পেলেই অন্যের মাঠে গিয়ে গোল দিতে চেষ্টা করেন। গত বছর শহরের ফুটপাতে হকার ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নাক গলান তিনি। পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ফুটপাত দখলমুক্ত করার পর হকাররা বিভিন্ন দফতরে ফুটপাতে ব্যবসার করার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেন। তাদের পক্ষে কিছু বাম সংগঠন ও কয়েকজন শ্রমিক নেতা ছিলেন। তারা হকারদের হয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিটি মেয়রসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়মতান্ত্রিক সুপারিশ করেন। তাদের প্রচেষ্টায় একটা সুন্দর সমাধান যখন সময়ের ব্যাপার ছিলো তখনই হঠাৎ হস্তক্ষেপ করেন শামীম ওসমান। শহরের বাইরের জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি শহরের ফুটপাত নিয়ে গরম বক্তৃতা দেন। তিনি সিটি করপোরেশনকে আল্টিমেটাম দেন। সচেতন মহলের মতে, তার এই আল্টিমেটাম হকারদের মাঝে উস্কানি হিসেবে কাজ করে। যে কারনে ১৬ জানুয়ারি (২০১৮ খ্রি.) হকার ইস্যু নিয়ে শহরে মেয়রের উপর হামলা হয়। এ হামলায় শামীম ওসমানের পুরনো ক্যাডার নিয়াজুল পিস্তল উঁচিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর দিকে তেড়ে যায়। সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। কিছু মানুষ মানবঢাল তৈরী করে আইভীকে রক্ষা করে। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় হয়।
২০১৫ সালের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে দু’টি বিদেশী দাতা সংস্থার সাথে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচীতে অর্থায়ণের বিষয়ে বৈঠক চলছিলো। বেলা ১১টার দিকে নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন করে শামীম ওসমান বলয়ের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নগরের হলেও মানববন্ধনে উপস্থিত অধিকাংশ মানুষ নগরবাসী ছিলেন না। মানববন্ধন থেকে স্লোগান দেয়া হয় ‘ আইভীর চামড়া তুলে নিবো আমরা’। পরে মানববন্ধনে এসে উপস্থিত হন মেয়র আইভী। তাকে দেখে ভড়কে যায় শামীম অনুগতরা। তাদের উদ্দেশ্যে আইভী বলেন, আমি এসেছি যদি সৎ সাহস থাকে তবে আমার চামড়া তুলে নাও। তার উপস্থিতি ও এমন কথা শুনে ধীরে ধীরে মানববন্ধনের পাট চুকিয়ে কেটে পড়ে তারা।
গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হলো বন্দর উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠায়। জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান ছিলেন এ তালিকার এক নম্বরে। এরপর বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশীদের নাম। আর তিন নম্বরে নাম ছিলো মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বন্দর থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি এমএ সালাম এর। এর মধ্যে সুফিয়ান এর উপর মেয়র আইভীর ছায়া ছিলো। দলীয় সূত্র জানায়, দলের পদ, মেয়রের সমর্থন ও নির্বাচন করার মতো আর্থিক ক্ষমতার কথা চিন্তা করে সুফিয়ানকেই যোগ্য মনে করেছিলো দল। মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা যখন প্রবল তখন সুফিয়ানকে ঠেকাতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন শামীম ওসমান। তার পছন্দের প্রার্থী ছিলো এমএ সালাম ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান। তবে সুফিয়ানের অবস্থানের কাছে ওই দুইজন টিকবেনা ভেবে শেষতক প্রবীণ রাজনীতিক এমএ রশীদের পক্ষ নেন শামীম ওসমান। পরে রশীদকেই বেছে নেয় দল। পরে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। সুফিয়ানকে ঠেকাতেই যে শামীম ওসমান এ বিষয়ে মাথা ঘামিয়েছিলেন পরে তার দেয়া বক্তব্যেও তা ফুঁটে উঠে।
তার এই অবস্থানের পর রাজনীতি সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বন্দর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামান অথচ তার এলাকায় নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়েতো তাকে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়না। উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন ও ফতুল্লা ইউনিয়ন নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এদিকে শামীম ওসমানের এমন দৌড়ঝাপকে অন্যের ঢেড়ায় হস্তক্ষেপ মনে করছে রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নিজের পুকুরে না সাঁতরে পরের পুকুরে সাঁতার কাটাই স্বভাব তার।